সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কী করা উচিত নয়?
ঘুমের গুরুত্ব কি ?
ঘুম আমাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে একটি। এটি শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য, জ্ঞানগত কার্যাবলী এবং মেজাজের জন্য অপরিহার্য। যখন আমরা যথেষ্ট পরিমাণ ঘুম পাই না, তখন আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকি, যার মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, মনোযোগ দেওয়ার অসুবিধা, রাগান্বিত হওয়া এবং দুর্ঘটনা এবং আঘাতের ঝুঁকি বাড়া।
আমাদের কত ঘুম প্রয়োজন?
আমাদের প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি আলাদা হয়, তবে বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কের প্রতি রাতে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। শিশু এবং আমাদের আরও বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়।
ঘুম কেন দরকার জানতে ভিজিট করুন এখানে।
ঘুমের সময় আমাদের দেহে কী ঘটে?
যখন আমরা ঘুমাই, তখন আমাদের দেহ এবং মন কঠোর পরিশ্রম করে। আমাদের দেহ কোষ এবং টিস্যু মেরামত করছে, এবং আমাদের মস্তিষ্ক স্মৃতি সংহত করছে এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করছে। ঘুম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং আবেগীয় নিয়ন্ত্রণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুম থেকে ওঠার সময় আমরা এমন অনেক কাজ করে থাকি, যার ফলে শরীরের নানা সমস্যা দেখা যায়। সেগুলোর কথা মাথায় রেখেই প্রত্যহ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু নির্দিষ্ট কাজ করা উচিত নয়। সেগুলোর কথা মাথায় রেখেই এবার ঘুম থেকে উঠে পরুন, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
ঘুমের উপকারিতা কী কী?
ঘুম আমাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য বিস্তৃত উপকারিতা রয়েছে। ঘুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা হল:
- শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার জন্য, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ঘুম অপরিহার্য।
- মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত: স্ট্রেস কমাতে, মেজাজ উন্নত করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ প্রতিরোধ করতে ঘুম গুরুত্বপূর্ণ।
- জ্ঞানগত কার্যাবলী উন্নত: ঘুম শেখার, স্মৃতি এবং সমস্যা সমাধানের জন্য অপরিহার্য।
- নিরাপত্তা উন্নত: ঘুম-বঞ্চিত লোকেরা কর্মক্ষেত্রে এবং রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
মেয়েদের পেট এর ওজন কমানোর ১০ টি উপায়
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কী করা উচিত নয়?
- সকালে ওঠার জন্য অ্যালার্ম দিলে কখনোই স্নুজ বাটন দিয়ে রাখবেন না। এতে একটু পরপর অ্যালার্ম বাজবে আর আপনি বারবার বন্ধ করে আবার ঘুমাবেন। এতে আপনার ঘুম পরিপূর্ণ হবে না।
- ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পা সোজা করে, হাত টানটান করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। এরপর উঠে বসুন। এতে সারা দিন আপনি বেশ সতেজ থাকবেন। আর যদি বিড়ালের মতো ভাঁজ হয়ে ঘুম থেকে ওঠেন, তাহলে সারা দিন আপনার ক্লান্ত লাগবে এবং ঘুম পাবে।
- ঘুম ভেঙেই ফোনে ই-মেইল বা মেসেজ দেখবেন না। এতে আপনার মস্তিষ্কের ওপর চাপ পরবে। আর খারাপ কোনো মেসেজ থাকলে পুরো দিনটাই খারাপ যাবে।
- ঘুম থেকে উঠে বিছানা অগোছালো অবস্থায় রেখে যাবেন না। চট করেই বিছানাটা গুছিয়ে ফেলুন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পরিষ্কার রুম দেখলে মনটা অনেক ফুরফুরে থাকবে।
- ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে চা একদম নয়। রাতে খাবার পর দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর অ্যাসিডিক হয়ে থাকে। ফলে দুধ-চিনি দেয়া চা বা কফি আমাদের শরীরকে আরও অ্যাসিডিক করে তোলে। তার বদলে বেশ খানিকটা পানি, লাইম জুস খেতে পারেন।৬. ঘরে এমনভাবে আলোর ব্যবস্থা করবেন যেন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর অন্ধকার না থাকে। ঘুম ভেঙে অন্ধকার দেখলে দ্বিধায় ভুগবেন এবং প্রচণ্ড ঘুম পাবে। তাই প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করতে পারবে, এমনভাবে ঘর সাজান।
- ঘরে এমনভাবে আলোর ব্যবস্থা করবেন যেন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর অন্ধকার না থাকে। ঘুম ভেঙে অন্ধকার দেখলে দ্বিধায় ভুগবেন এবং প্রচণ্ড ঘুম পাবে। তাই প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করতে পারবে, এমনভাবে ঘর সাজান।
- ফিটনেস এক্সপার্টদের মতে, সকালে উঠে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে চুপ করে থাকুন। বেশ কয়েকটি ডিপ ব্রিথ (লম্বা শ্বাস) নিন। ঘরের উষ্ণতায় রাখা পানি পান করুন। তারপর কাজ শুরু করুন।
- ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের মাংসপেশী, বিশেষত মেরুদণ্ড একটু স্টিফ হয়ে থাকে। ফলে উঠে বসার আগে একটু স্ট্রেচ না করলে এই স্টিফনেস সারা দিন থাকতে পারে। তাই বিছানায় শোয়া অবস্থায় ৩-৪ বার একটু হাল্কা স্ট্রেচ করে তার পর উঠুন।
- ব্রেকফাস্ট না করার যদি অভ্যাস থাকে তো এখনই পাল্টে ফেলুন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্রেকফাস্ট যারা করেন না তারা স্থুলতা, ডায়াবেটিক এবং অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করলে শরীর একেবারে চাঙ্গা থাকবে। কয়েকটি ভেজানো কাঠবাদাম, রুটি-তরকারি বা ফল ইত্যাদি খেতে পারেন।
- কোনো কারণে সকাল সকাল মেজাজ খারাপ হলেও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। অনেকের স্বভাব থাকে সকালে খুব বেশি আওয়াজে গান চালানোর। এটাও ত্যাগ করুন। সঙ্গীত অবশ্যই ভালো। তবে সব সঙ্গীত নয়। সকালে উঠে পাখির ডাক শুনুন, হালকা রাগ সঙ্গীতও খুব উপকারী।
- অনেকে মনে করেন, সকাল সকাল এক কাপ কড়া কালো কফি খেলে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। কিন্তু, খালি পেটে ধূমপান বা কড়া কফি আপনার শরীরকে পুষ্টি থেকে কয়েক যোজন দূরে সরিয়ে দেবে। ফলে খালি পেটে আগে পানি খান।
- অনেকে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জিমে দৌড়ান, যা একেবারেই করা উচিৎ না।
সকাল বেলা যদি আপনার ভালো যায় তাহলে সারাদিনটাই ভালোভাবে কাটার সম্ভাবনা থাকে। তবে ভালো থাকাটা নির্ভর করছে একান্ত আপনার ওপর। নিজে সুস্থ রাখার জন্য নিজেকে কিছু জিনিস মেনে চলতেই হবে, নয়তো ক্ষতি আপনার নিজেরই হবে।